সীতাকুণ্ডে কৃষি জমি ভরাটের চেষ্টা, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গ্রামবাসীর প্রতিরোধ

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নে কৃষি জমি ভরাটকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার দুপুরে পশ্চিম সৈয়দপুর গ্রামে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে কয়েকজন জামায়াত নেতাকে ধাওয়া করে এলাকা থেকে বের করে দেন। গ্রামবাসীর অভিযোগ, ফসলি জমি নষ্ট করে সমুদ্র থেকে বালু তুলে জমি ভরাটের চেষ্টা চলছিল।

কি ঘটেছিল সেদিন

স্থানীয় সূত্র জানায়, কুমিরা ইউনিয়ন জামায়াত নেতা জসিম উদ্দিন এবং পৌর জামায়াত নেতা কমিশনার রেহান উদ্দিনের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক লোক সৈয়দপুরের উপকূলে প্রায় ১০০ একর কৃষি জমি ভরাটের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। দুপুরে তারা ড্রেজার বসিয়ে বালু তোলার কাজ শুরু করেন।

বিষয়টি ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় কৃষকরা মসজিদের মাইকে ঘোষণা দেন এবং অল্প সময়ের মধ্যেই চার থেকে পাঁচশত মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হন। তারা বালু ভরাটের পাইপ ভেঙে ফেলেন এবং নেতাদের থামাতে বললে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে জনতার চাপে জসিম উদ্দিন, রেহান উদ্দিনসহ অন্য নেতারা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। পালানোর সময় কয়েকজন আহত হয়েছেন বলেও জানা যায়।

জমি ভরাটের পেছনের প্রেক্ষাপট

অভিযোগ রয়েছে, প্যাসিফিক জিন্সের এমডি ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর কয়েক বছর আগে তাজুল ইসলাম নামে এক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে প্রায় ১০০ একর কৃষি জমি কিনে নেন। তখন স্থানীয়দের জানানো হয়েছিল এটি সরকারি প্রকল্পের জন্য জমি কেনা হচ্ছে।

বছরের পর বছর ভরাট করতে না পারলেও সম্প্রতি আবারও জমি শিল্পকারখানার কাজে ব্যবহার করার উদ্যোগ শুরু হয়। এর অংশ হিসেবে সোমবার বালু তোলার প্রস্তুতি নেয়া হয়।

গ্রামবাসীর ক্ষোভ

সৈয়দপুর পুরো অঞ্চলই শীতকালীন সবজির জন্য পরিচিত। এলাকাজুড়ে টমেটো, ফুলকপি, বরবটি, লাউ, শিমসহ নানা শস্য চাষ করা হয়। কয়েকশত কৃষকের পরিবার কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলছেন—ফসল থাকা অবস্থায় কীভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান কৃষি জমিতে বালু ঢালতে পারে। পরিবেশের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলেও তারা মনে করেন। তাদের দাবি, কোনো ধরণের ভরাটের আগে পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনের অনুমতি দেখাতে হবে।

রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর অবস্থান

জামায়াতের স্থানীয় নেতারা দাবি করেছেন, তাদের দলের নাম ভাঙিয়ে কিছু লোক এসব করছে। প্রকৃতপক্ষে কৃষি জমি নষ্ট করার কাজে জামায়াতের কেউ যুক্ত নয়।

বিএনপি ও স্থানীয় যুব সংগঠনগুলোর নেতারাও জানিয়েছেন, কৃষি জমি রক্ষায় তারা এক অবস্থানে আছেন। কেউ দলীয় পরিচয়ে এলাকার সম্পদ নষ্ট করতে পারবে না।

পরিবেশ কর্মী ও বিশেষজ্ঞদের মত

পরিবেশ আন্দোলনকারীরা অভিযোগ করছেন, সীতাকুণ্ডে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান কৃষি জমি ধ্বংস করছে। ইতিমধ্যেই হাজার হাজার একর জমি নষ্ট হয়েছে। আবারও একই পথে হাঁটা হচ্ছে, যা পুরো অঞ্চলের পরিবেশ ও জীবিকায় বড় ক্ষতি ডেকে আনবে।

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

সীতাকুণ্ডের ইউএনও ফখরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সমুদ্র থেকে বালু তুলে কৃষি জমি ভরাটের কোনো অনুমতি কেউ পায়নি। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মডেল থানার ওসিও বলেছেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন, তবে এখনো কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দেয়নি।


Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *